আজ বুধবার, ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে দেশ, চতুর্থে না.গঞ্জ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
এরই মধ্যে সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এমন বক্তব্য খোদ আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনার। তিনি বলেছেন, রাজধানীর টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর) ও গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর) এই পাঁচটি এলাকায় গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে সারাদেশে চলমান করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই হিমশিম খেতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে। করোনা ভাইরাস এই জেলা থেকে শুরু হতেই একের পর এক আলোচনায় আসতে থাকে বিভিন্ন ঘটনাবহুল চিত্র। নারায়ণগঞ্জ শহরের আল জয়নাল প্লাজা থেকে শুরু করে সর্বশেষ বন্দর উপজেলার রসুলপুর এলাকা এবং পাইকপাড়া এলাকায় কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে করোনার প্রকোপ তার অবস্থান জানান দিলো। এদিকে ইংল্যান্ড ভিত্তিক গণমাধ্যম সংস্থা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এক তথ্যে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের ৩য় ঝুঁকিপূর্ন জেলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার সংক্রমন ও বিস্তার একটি ম্যাপের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেখানে প্রথম অবস্থানে রাখা হয়েছে দেশের রাজধানী ঢাকা কে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে মাদারীপুর জেলা যেখানে সর্বপ্রথম একটি উপজেলাকে পুরোপুরি লকডাউন করে দিতে বাধ্য হয় সরকার। তার পরেই অবস্থান রয়েছে নারায়ণগঞ্জের। এটি স্পস্ট যে নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যা মাদারীপুর জেলার তুলনায় অনেক বেশী। খুব দ্রুতই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে এর ভয়াবহতা পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়বে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, এখন পর্যন্ত নারায়ণ গঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬। এদের মধ্যে ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ১ জন মারা গেছেন। এছাড়া কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৪৯৮ জন এবং আইসোলশোনে ১ জন। তবে নিহতের বিষয়টি আইসিডিআর থেকে ঘোষণা দেয়া না হলেও নিহত ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট পজেটিভ বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলায় প্রায় ২০ লাখ লোকের বসবাস। নির্বাচন কমিশন হতে প্রাপ্ত এই তথ্য থেকে আরও বেশী মানুষ জেলায় বসবাস করে আসছে। মূলত বিভিন্ন কলকারখানা এবং কাজের সূত্রে নারায়ণগঞ্জে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছে আরও লক্ষাধিক মানুষ। বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও এর বাইরে বিভিন্ন কলকারখানা এখনও চালু রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠান গুলোও চলছে তাদের নিজস্ব গতিতে। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের যথেষ্ট পথ এখনও খোলা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় প্রশাসনের যে ধরণের তৎপরতা লক্ষ করা যায় সে ধরণের কার্যক্রম আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিতে প্রয়োজন। এখনও মানুষ চায়ের দোকানে, হাটবাজারে নিত্যদিন আড্ডা দিয়ে চলেছে। থেমে নেই উঠতি বয়সীদের বেপরোয়া আচরণ। প্রতিনিয়ত আয়োজন করে মাঠে ক্রিকেট ফুটবল খেলা আর সন্ধ্যার পর মাদক সেবন বেড়েছে বহুগুণে। করোনা ইস্যুতে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় অপরাধও বেড়ে চলছে গোপনে। পাড়া মহল্লায় বেড়াতে আসছে মানুষ। করোনা আতংকে তটস্থ থাকার বদলে ঈদ উৎসব পালন করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসকল কারনের পেছনে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বয়স্কদের নাছোড়বান্দা আচরণ অনেকাংশে দায়ী। এদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আজীবন পুরুষদের বেপরোয়া আচরণ করতে শিখিয়েছে। কোন কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে তাদের বেপরোয়া আচরণ প্রভাব ফেলেছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। ছেলেমেয়েরা তাদের সচেতন হবার পরামর্শ ও বোঝানোর চেষ্টা করলেও উল্টো হিতে বিপরীত আচরণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। কখনও কখনও ধর্মের দোহাই দিয়ে করোনার ঝুঁকি উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। ফলে ক্রমশই এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ বাসী।

এসএএইচ/এসএমআর